এখন সময় সামাজিক উদ্যোগ গ্রহণের কয়েক মাস ধরে প্রস্তুতি গ্রহণ এবং পরিকল্পনা করার পর পিফরডি বহুমুখী কর্ম সম্পাদনকারী (ম্যাপ) পার্টনাররা এখন তাদের সামাজিক উদ্যোগ প্রকল্প (স্যাপ) বাস্তবায়নে ব্যস্ত সময় পার করছে। পিফরডি থেকে মূলধন নিয়ে মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের সঙ্গে পার্টনারশিপের মাধ্যমে ইইউ-এর অর্থায়নে একটি তিন বৎসর মেয়াদী প্রকল্পে এই প্রাণবন্ত দলগুলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে তাদের কমিউনিটিতে তোলপাড় শুরু করে দিয়েছে। ম্যাপ দলগুলোকে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, নেতৃত্ব, যোগাযোগ সামাজিক উদ্যোগ প্রকল্প এবং সামাজিক জবাবদিহিতা উপকরণ যেমন: আরটিআই, জিআরএস, এনআইএস এবং সিসি’র উপর প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণ শেষে এই দলগুলো এবং পিফরডি’র পার্টনাররা স্থানীয় বিষয়গুলো খুঁজে বের করার জন্য তাদের কমিউনিটিতে ফিরে গেছে। তারা কমিউনিটি উদ্যোগ গ্রহণ এবং জবাবদিহিতা নীতি উপকরণগুলো ব্যবহারের মাধ্যমে ঐ বিষয়গুলো সমাধানের লক্ষ্যে প্রাপ্ত প্রশিক্ষণকে কাজে লাগাণোর সুযোগ খুঁজতে শুরু করেছে। পুরো ফেব্রুয়ারি এবং মার্চ মাস জুড়ে ম্যাপগুলো কমিউনিটির সঙ্গে পরামর্শের মাধ্যমে অনেক স্থানীয় সমস্যা এবং সামাজিক প্রতিবন্ধকতা খুঁজে বের করেছে। পরে তারা ঐ সমস্যা এবং বাধাগুলো একটি কাঠামোবদ্ধ এবং গঠনমূলক উপায়ে সমাধানের লক্ষ্যে সামাজিক উদ্যোগ প্রকল্প (স্যাপ) প্রণয়ন করে। বাস্তবায়ন পর্যায়ে স্যাপ এবং পিফরডি’র বহুমুখী কর্ম সম্পাদনকারী পার্টনাররা স্থানীয় সরকার, প্রশাসন, বিভিন্ন সেবাদানকারী কর্তৃপক্ষ এবং সংশ্লিষ্ট জনগণের অভিন্ন স্বার্থ এবং জবাবদিহিতার ভিত্তিতে একটি জোট গড়ে তোলে।
এখানে সামাজিক উদ্যোগ প্রকল্পের কিছু আকর্ষণীয় বিষয় তুলে ধরা হলো: স্যাপের অংশ হিসেব গাইবান্ধা জেলার খোলাহাটি ইউনিয়নের, জনগণ এবং সিএসওগুলো নিরাপত্তা বলয় কর্মসূচির অধীনে নাগরিক সনদ তৈরির মাধ্যমে দুর্নীতি দূর করার লক্ষ্যে স্থানীয় চেয়ারম্যানের সঙ্গে সভা করে চলেছে। বিশেষত নারী এবং বয়স্ক মানুষের সামাজিক নিরাপত্তার অধিকার রক্ষায় স্থানীয় সিএসও সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। এ সময়ে সিলেটের বাদাঘাটে বহুমুখী কর্ম সম্পাদনকারী পার্টনাররা স্থানীয় জনগণের সঙ্গে মিলিত হচ্ছে এবং কর আদায়ে সচেতনতা সৃষ্টি করছে। ঐ এলাকার কিছু কিছু অধিবাসী কর প্রদানকারী হিসেবে তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে জানে। নাগরিক দায়িত্বের অংশ হিসেবে কর পরিশোধের প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করার জন্য স্যাপের উদ্যোগে স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিগণ এগিয়ে আসছেন। বাল্যবিবাহের ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে সতর্ক করার লক্ষ্যে স্যাপ পটুয়াখালি জেলার মাদারবুনিয়া ইউনিয়নে বিদ্যালয়গুলোতে বিশেষত মেয়েদের কাছে যাচ্ছে। ম্যাপ মনে করে অল্প বয়সে বিয়ের পরিবর্তে শিক্ষাকে বেছে নেয়া সম্পর্কে কথা বলতে মেয়েদের জন্য সঠিক এবং সবচেয়ে নিরাপদ স্থান হলো বিদ্যালয়। আরও ঘটনা ঘটছে মাগুরা এবং সুন্দালি ইউনিয়নের বিদ্যালয়গুলোতে যেখানে বিদ্যালয়ে ঝরে পড়ার সংখ্যা কমিয়ে আনার ধাপগুলো আলোচনা করার জন্য স্যাপ বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটিগুলোর সঙ্গে আলোচনা সভা আয়োজন করছে। প্রকল্পের জন্য এটি এখন একটি রোমাঞ্চকর সময়। সিএসও পার্টনার এবং ম্যাপগুলোর মাধ্যমে পিফরডি আরও অনেক বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। উপরন্তু, পিফরডির লক্ষ্য হলো প্রকৃত সমস্যাগুলোকে সঠিক প্রেক্ষাপটে স্থাপন করে সামাজিক জবাবদিহিতা সম্পর্কে জনগণকে জ্ঞানে এবং উপলব্ধিতে সমৃদ্ধ করা যা এখন অবশেষে সম্পন্নের পথে। পিফরডি’র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পাতা ইতিমধ্যেই হালনাগাদ তথ্যে ভরে উঠেছে।
সামাজিক উদ্যোগ প্রকল্প – ওয়ার্ড পর্যায়ে সভার গল্প
প্ল্যাটফর্ম ফর ডায়ালগ (পিফরডি) প্রকল্পের অধীনে বহুমুখী কর্ম সম্পাদনকারী পার্টনাররা এ বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট পরিশ্রমের সঙ্গে কাজ করেছে। তাদের অনেক সামাজিক উদ্যোগ প্রকল্পের আওতায় ম্যাপগুলো ইউনিয়ন পরিষদে ওয়ার্ড সভা আয়োজন করছে। ওয়ার্ড সভাগুলো হলো স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি (ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এবং সংশ্লিষ্ট সদস্য) এবং জনগণ উভয়ের জন্যই একটি উন্মুক্ত স্থান যেখানে তারা বার্ষিক কর্মসূচি বাস্তবায়ন পরিকল্পনা প্রণয়নে অংশগ্রহণ করে। ওয়ার্ডের উন্নয়ন অগ্রাধিকারগুলো সভায় আলোচনা করা হয়। সভাগুলো একদিকে যেমন জনগণকে জড়িত করেছে তেমনি অন্যদিকে স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষকে জবাবদিহি করে তুলেছে। কিছু কিছু ম্যাপ দল ইউপি প্রতিনিধি এবং কমিউনিটির উপস্থিতিতে উন্মুক্ত বাজেট সভা আয়োজন করেছে যেখানে ইউপি প্রতিনিধিগণ বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকা-ে বাজেট বরাদ্দ নিয়ে আলোচনা করেছেন।
ইউপি সদস্যদেরকে উজ্জীবিত করা এবং জনগণকে কাজে লাগানোর মাধ্যমে কাজটিকে বাস্তবে রূপ দিতে ম্যাপগুলো একটি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। তারা ইউনিয়ন পরিষদের সঙ্গে প্রারম্ভিক সভাগুলো আয়োজন করে এবং ইউপি কর্মকা-ের পরিকল্পনায় আরও বেশি অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রক্রিয়া অবলম্বনের বিষয়ে আলোচনা করে। একইভাবে, জনগণ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা বিষয়ে ম্যাপগুলো স্থানীয় পর্যায়ে প্রচারাভিযানের মাধ্যমে তাদের সচেতনতা বৃদ্ধি করে। উৎসাহের সঙ্গে এই সুযোগকে সাধুবাদ জানানো হয়। “আমরা অন্যান্যদের সঙ্গে আমাদের ওয়ার্ড মিটিংগুলো উপভোগ করছি। আমাদের চাহিদাগুলো সম্পর্কে কথা বলতে পারা আমাদের জন্য একটি বিরাট সুযোগ।” কথাগুলো বলেন ৩৬ বছর বয়স্ক আশরাফ যিনি নেত্রকোনার পূর্বধলায় প্রথমবারের মত ওয়ার্ড মিটিং-এ অংশগ্রহণ করেন। “আমরা প্রথমবারের মত অনেক মানুষের সামনে আমাদের চেয়ারম্যান এবং মেম্বারদেরকে দেখতে পাচ্ছি। এটি একটি চমৎকার উদ্যোগ!” বললেন জামালপুর জেলার ইসলামপুরের ৪০ বছর বয়স্ক নারী আমেনা বেগম। এভাবেই জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল (ন্যাশনাল ইন্টেগ্রিটি স্ট্র্যাটেজি) এবং তথ্যে অধিকার বাস্তবায়নেও সামাজিক উদ্যোগ প্রকল্প একটি পদক্ষেপ। যেমনটি মেঘবর্ষণ সমাজ কল্যাণ সংস্থা থেকে ম্যাপ নুরুল্লাহ মহসিন বললেন, “জরুরি বিষয় হলো এনআইএস অনুযায়ী ইউনিয়ন পরিষদের সকল পরিকল্পনা প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হওয়া প্রয়োজন এবং সেখানে জনগণের কথা শোনা উচিত।” পানিশ্বর ইউনিয়নের বেড়তলা সমাজ কল্যাণ সমিতি থেকে ম্যাপ শিরীন বেগম বলেন, “আমি আমার এলাকাবাসীকে ইউপি কর্মকা-ের তথ্যে অভিগমনের (এক্সেস) সুযোগ করে দিতে পেরে ভীষণ গর্বিত।” পিফরডি ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অর্থায়নে ৩ বৎসর মেয়াদি একটি প্রকল্প যা মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের সঙ্গে পার্টনারশিপের মাধ্যমে ব্রিটিশ কাউন্সিল কর্তৃক বাস্তবায়িত হচ্ছে।
Comentarios