top of page

জিআরএসের মাধ্যমে সরকারি সেবার গুণগত মান বৃদ্ধিতে অবদান রাখছে জামালপুরের ইউনিক ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশন

Updated: Mar 14, 2022


অভিযোগের নিরসন কোনও সংস্থার দক্ষতা এবং বিশ্বাসযোগ্যতার এক গুরুত্বপূর্ণ সূচক হিসাবে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। সরকারী পর্যায়ে অভিযোগ নিষ্পত্তি হ'ল একটি প্রশাসন সম্পর্কিত ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়া যা নাগরিকদের উন্নত পরিষেবা নিশ্চিত করতে সহায়তা করে। বাংলাদেশ সরকার অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থা বা গ্রিভেন্স রিড্রেস সিস্টেম (জিআরএস) ব্যবহার শুরু করেছে, যা সেবায় অসন্তুষ্ট হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করতে নাগরিকদের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম। প্রশাসনকে নাগরিকদের কাছে দায়বদ্ধ করে তোলা, পরিষেবার মান উন্নত করা, এবং সুশাসন জোরদার করতে জিআরএসের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।


প্ল্যাটফর্মস ফর ডায়ালগ (পিফরডি) সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থার ওপর প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছে যাতে স্থানীয় জনগণ ও সরকারি কর্মকর্তাগণ সফলভাবে অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থাটি ব্যবহার করতে করতে পারেন। ​আমরা অংশীদারি সুশীল সমাজ সংস্থাগুলোকেও জিআরএস এর ওপর প্রশিক্ষণ দিয়েছি যাতে তারা স্থানীয় পর্যায়ে নাগরিকদের এই নীতিমালা গুলোর ব্যবহারের শিক্ষা দিতে পারে এবং ফলস্বরূপ নাগরিকগণ ভবিষ্যতে প্রাপ্য সেবার মান নিশ্চিত করতে পারেন।


এছাড়াও, পিফরডি’র কমিউনিটি রিসোর্স সেন্টার (সিআরসি) গুলো কম্পিউটারের মাধ্যমে অনলাইন জিআরএস প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করতে নাগরিকদের সহায়তা করেছে। আমাদের অংশীদারী সংস্থাগুলোর বিবরণে উঠে আসা গল্পগুলি জিআরএসের কার্যকারিতা এবং সমাজের ওপর এর ইতিবাচক প্রভাব তুলে ধরে।


ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে জামালপুর জেলার গুঠালি গ্রামে অবস্থিত ইউনিক ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশন। সংগঠনের কর্ণধার মিস্টার নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা। এ সংস্থায় কাজ করার অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে গিয়ে সদস্যরা জানান, সরকারের একটি বাঁধ প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণের কবল থেকে গ্রামটিকে রক্ষা করেছেন তারা।


এটা কিভাবে সম্ভব হলো জানতে চাইলে মিস্টার জানান যে, তারা সরকারের অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থা নিয়ে প্রচারণা চালানোর পর গ্রামের মানুষ সচেতন হয়ে ওঠেন। একদল গ্রামবাসী এসে একজন মাল্টি অ্যাক্টর পার্টনারের (এমএপি) কাছে অভিযোগ জানায়।


আমাদের একটি সোশ্যাল অ্যাকশন প্রজেক্টের (এসএপি) মাধ্যমে তারা অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে পারেন। সেনাবাহিনী তাদের ফসলি জমি ও ঘরভিটার ওপর বাঁধ নির্মাণ করতে গেলে আমরা তাদেরকে অভিযোগ দায়ের করতে সহায়তা করি।

বলছিলেন মিস্টার।


ব্রিটিশ কাউন্সিলের প্ল্যাটফর্মস ফর ডায়লগ (পিফরডি) প্রকল্পের আওতায় অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থা নিয়ে এই প্রচারণা চালানো হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে ও বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের সহায়তায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ব্রিটিশ কাউন্সিল। অভিযোগ প্রতিকার বিষয়ক প্রচারণাটি পরিচালনা করেন সংগঠনের সদস্য ফাহাদ হোসেন।


২০১০ সালে গড়ে ওঠা সংগঠনটির এমন আরো বহু গল্প রয়েছে। ঐ বছর উচ্চমাধ্যমিক পাশ করা ৩২ জন ছাত্র মিলে ইউনিয়নের মানুষের জন্য কল্যাণমূলক কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন। বন্যাকবলিত ও সরকারি সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়ায় এলাকাটি বহু বছর ধরে নানা সমস্যায় জর্জরিত ছিল।


মাধ্যমিক পাশ সেই তরুণেরা বর্তমানে একেকজন সফল ব্যবসায়ী, কৃষক, উদ্যোক্তা ও সমাজকর্মী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। ফলে তাদের সংগঠন এলাকার কল্যাণমূলক কাজের পরিকল্পনা করার এবং আলোচনা সভা আয়োজনের একটি গণতান্ত্রিক কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।


বর্ষায় এ অঞ্চলের ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়ে হাজারো গ্রামবাসীর জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়ে। তাই প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই সংগঠনটি ইসলামপুর ইউনিয়নের বন্যাদুর্গত এলাকায় ত্রাণ বিতরনের কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়া, প্রতি বছর তারা দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদেরকে আর্থিক সহায়তা দিয়ে থাকে। পাশাপাশি, মাদ্রাসার এতিম ছাত্রদেরকেও আর্থিক সাহায্য করে।



ইতোমধ্যেই এ সংস্থা সমাজসেবা অধিদপ্তরের আনুমোদন লাভ করেছে। ইসলামিক রিলিফ নামক একটি আন্তর্জাতিক সংগঠনের সাথে সংস্থাটি দরিদ্রদের মাঝে কম্বল, খাবার ও অন্যান্য জরুরি সামগ্রী বিতরণ করেছে। ২০১৭ সাল থেকে এটি পিফরডির কৌশলগত সহযোগী হিসেবে কাজ করছে। সমাজকর্মী হিসেবে নিজেদের পূর্বাভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে সংগঠনের সদস্যরা পিফরডির কয়েকটি সোশ্যাল অ্যাকশন প্রজেক্ট (এসএপি) বাস্তবায়ন করেছেন। সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ যেমন – তথ্য অধিকার, অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থা, জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল, সিটিজেন চার্টার ইত্যাদি নিয়ে এসএপিগুলো সাজানো হয়েছে।


এখন পর্যন্ত সংগঠনটি সবচেয়ে বেশি সাফল্য পেয়েছে অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থা সম্পর্কিত এসএপিতে। সংস্থার কর্মীরা জল্লুখাঁ, সাহার আলী, হিরা সরকার, শরীফুদ্দীন, মোরশেদা, রফিকুল ও শারমিনা সহ কয়েকজন মানুষের বাড়ি জোরপূর্বক দখল হওয়ার হাত থেকে বাঁচিয়েছেন।


পিফরডির সহায়তার কথা তুলে ধরে আবেগজড়িত কন্ঠে মোরশেদা বলেন, “এই বাড়িতে আমার সাথে আমার তিনজন নাতি থাকে। তারা বাড়ি দখল করে ফেললে আমাদেরকে রাস্তায় থাকতে হতো।”


অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থা ছাড়াও সংস্থাটি ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী প্রকল্পে দূর্নীতি ও শিক্ষার মান নিয়ে কাজ করেছে। মিস্টারের মতে, পিফরডির সাথে কাজের অভিজ্ঞতা তাদেরকে জনকল্যাণমূলক কাজের উপায়-উপকরণ জুগিয়েছে। তিনি বলেন,


“আপনি মুক্তিযুদ্ধের সময়ের একটা কথা জানেন? ‘আমরা অস্ত্র জমা দিয়েছি, প্রশিক্ষণ নয়।’ পিফরডির ব্যাপারে আমি এই কথাটাই বলবো। আমরা এখান থেকে অনেক কিছু শিখেছি। সামনে আরো বড় কোনো জনকল্যাণমূলক কাজে এই শিক্ষা ব্যবহার করবো।”

বাংলাদেশ সরকারের ‘ভিশন ২০২১’ দুর্নীতি দমন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় প্রক্রিয়াগত উন্নয়নের উপর জোর দিচ্ছে। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য সমস্ত মন্ত্রণালয় এবং সরকারী অফিসগুলির জন্য অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। জিআরএস যারা পরিচালনা করবেন তাদের সামাজিক এবং নৈতিক প্রতিশ্রুতিগুলি তাদের কাজের কেন্দ্রবিন্দুতে রাখা অপরিহার্য।


জিআরএসের চূড়ান্ত দায়িত্ব সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারীদের অভিযোগ গ্রহণ এবং প্রতিটি অভিযোগের প্রতি সাড়া প্রদানে তাদের দক্ষতার উপর নির্ভর করে। অভিযোগগুলি প্রতিকারের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা যদি সংবেদনশীল না হন এবং কার্যকরভাবে তাদের কাজগুলি সম্পন্ন না করেন তবে প্রক্রিয়াটি ব্যর্থ হবে। পিফরডি প্রশিক্ষণ প্রদান এবং সহায়ক ভুমিকা পালনের মাধ্যমে সরকারী কর্মকর্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে কাজ করছে যাতে তারা সততা এবং নিষ্ঠার সাথে তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারেন।

341 views0 comments
bottom of page