top of page

জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নে কাজ করছে ডিপিএফ পঞ্চগড়ঃ কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবা পাবে সব নাগরিক

Updated: Dec 6, 2022


পঞ্চগড় জেলার ডিপিএফ সদস্যগণ
পঞ্চগড় জেলার ডিপিএফ সদস্যগণ

জয়নাল আবেদীনের ধারণা ছিল ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে শুধু গর্ভবতী নারীদেরকেই চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়। একদিন পঞ্চগড় ডিস্ট্রিক্ট পলিসি ফোরামের সদস্যরা তাকে একটি বৈঠকে অংশগ্রহণ করতে বললেন। তারপর থেকে তার ধারণা সম্পূর্ণ বদলে গেলো। তিনি জেনে চমৎকৃত হলেন যে এসব স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যে কেউ তাদের ছোটখাটো স্বাস্থ্যগত সমস্যা নিয়ে যেতে পারেন। স্থানীয় একটি মসজিদের ইমাম জয়নাল আবেদীন তার মসজিদের মুসল্লিদেরকেও স্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রাপ্ত সেবাগুলোর ব্যাপারে জানালেন। জয়নাল আবেদীনের মতো পঞ্চগড়ের অনেক মানুষই জেলার ১১১টি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সেবার বিষয়ে এখনো অবগত নন।


প্ল্যাটফর্মস ফর ডায়ালগ (পিফরডি) প্রকল্পের অংশ হিসেবে পঞ্চগড়েও গঠিত হয়েছে ডিস্ট্রিক্ট পলিসি ফোরাম (ডিপিএফ)। এই ফোরামের কার্যক্রমের কেন্দ্রে রয়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদেরকে ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বিষয়ে সচেতন করা এবং ক্লিনিক ব্যবস্থাপনা কমিটিকে আরো সক্রিয় করে তোলা। পাশাপাশি, সামাজিক দায়বদ্ধতার উপকরণগুলো সম্পর্কে জনসাধারণকে সচেতন করতে এবং এসব উপকরণ ব্যবহার করে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সেবার মান বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে অনলাইন ও অফলাইনে আলোচনা সভা ও কর্মশালার আয়োজন করেছে এই ফোরাম।


ইউরোপিয় ইউনিয়নের অর্থায়নে ও বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের সহায়তায় প্ল্যাটফর্মস ফর ডায়ালগ (পিফরডি) প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। এ প্রকল্পেরই নতুন উদ্যোগ হলো ডিস্ট্রিক্ট পলিসি ফোরাম। সামাজিক দায়বদ্ধতার প্রধান চারটি উপকরণ – সিটিজেন চার্টার, তথ্য অধিকার, জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল ও অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থা ব্যবহারের মাধ্যমে সরকারের জবাবদিহিতা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে সুশীল সমাজ ও জনসাধারণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে কাজ করছে এই ফোরাম। দেশের ১২টি জেলায় পিফরডির আওতায় এমন ১২টি পলিসি ফোরাম গঠন করা হয়েছে। শিক্ষার মানোন্নয়ন, বাল্যবিয়ে রোধ ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সেবার মান বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করে কাজ করছে জেলাভিত্তিক এসব ফোরাম। তাদের লক্ষ্য ছিল সামাজিক দায়বদ্ধতার প্রধান চারটি উপকরণ ব্যবহার করে সহযোগিতামূলক পদ্ধতিতে সমাজ উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রশাসন ও সুশীল সমাজের মধ্যকার দূরত্ব কমিয়ে আনা। সাংবাদিক, আইনজীবী ও স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি সহ ২০ জন সদস্যের সমন্বয়ে ডিপিএফ গঠনে মূল ভূমিকা পালন করেন পিফরডি প্রকল্পের জেলা কর্মকর্তা রিক্তা পারভিন।


প্রথমেই পঞ্চগড় ডিপিএফের সদস্যরা স্থানীয় বাসিন্দাদেরকে জানালেন যে, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে বয়স, লিঙ্গ ও শ্রেণি-পেশা নির্বিশেষে সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা রয়েছে। তারা লক্ষ্য করলেন, ক্লিনিকগুলোতে শুধু নারীরাই সেবা নিতে যান। সুতরাং, ফোরামের সদস্যরা তাদের বৈঠকগুলোতে ইউপি চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য, স্কুলশিক্ষক, মসজিদের ইমামসহ এলাকার নেতৃস্থানীয় মানুষদেরকে একত্রিত করলেন যেন তাদের মাধ্যমে সর্বস্তরের মানুষের কাছে ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রদত্ত সেবার বিষয়ে জানানো যায়। ফোরামের সদস্য লুৎফুর রহমান বলেন,

“কমিউনিটি ক্লিনিকে সেবার জন্য পুরুষদের না আসাটা একটা অস্বাভাবিক বিষয়। এই কারণেই আমরা এলাকার নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদেরকে এলাকায় সচেতনতা তৈরি করতে আহ্বান জানিয়েছি।”
লুতফর রহমান, পঞ্চগড় জেলা ডিপিএফ সদস্য
লুতফর রহমান, পঞ্চগড় জেলা ডিপিএফ সদস্য

পরবর্তী ধাপ হিসেবে ফোরামের সদস্যরা ক্লিনিক ব্যবস্থাপনা কমিটি ও কমিউনিটি সাপোর্ট গ্রুপকে সক্রিয় করার চেষ্টা করেছেন। সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি হওয়ার পাশাপাশি জেলা সিভিল সার্জনের নিয়মিত পরিদর্শন ও তৎপরতায় ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো সক্রিয় হতে শুরু করলো। এগুলোর অন্যতম মাগুরা ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র।


চাকলাহাট ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের স্বাস্থ্যকর্মী একজন সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মী হওয়ায় তিনি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিজের দায়িত্ব পালনে আন্তরিক ছিলেন না। তবে ডিপিএফ সদস্যরা তার সাথে কথা বলার পর থেকে তিনি আন্তরিতার সাথে নিয়মিত দায়িত্ব পালন করছেন।


স্বাস্থ্যকেন্দ্রের একটি সাধারণ সমস্যা হলো সেখানে স্বাস্থ্যকর্মীদের অনুপস্থিতি। শুধু এ কারণেই অনেক রোগী সেবা নিতে এসেও ফিরে যান। দূরের গ্রাম থেকে আসা রোগীদের জন্য বিষয়টি অত্যন্ত হতাশাজনক। কারণ চিকিৎসাসেবা নিতে হলে হয়তো সারাদিন বসে থাকতে হবে।


এ সমস্যা সমাধানে ডিপিএফ সদস্যরা স্বাস্থ্যকর্মীদেরকে নির্দেশনা দিয়েছেন যেন তারা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সাক্ষাতের সময় লেখা স্টিকার লাগিয়ে রাখেন। স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে সিটিজেন চার্টারের ব্যবস্থা করা হয়েছে যেন রোগীরা তা দেখেই বুঝতে পারেন, এখানে কী কী সেবা পাওয়া যায়। সব মিলিয়ে ডিপিএফের কার্যক্রমের ফলে এখন জেলার স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো আগের তুলনায় বেশ কার্যকর হয়ে উঠেছে।

“স্বাস্থ্যকর্মী, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও পরিবার কল্যাণ বিষয়ক সহকারী এখন তাদের কাজের প্রতি আরও আন্তরিক।” - ডিপিএফ সদস্য মো: মোখলেসুর রহমান
“স্বাস্থ্যকর্মী, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও পরিবার কল্যাণ বিষয়ক সহকারী এখন তাদের কাজের প্রতি আরও আন্তরিক।” - ডিপিএফ সদস্য মো: মোখলেসুর রহমান

স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সেবার মান বৃদ্ধি করার ছাড়াও পঞ্চগড় ডিপিএফ সামাজিক দায়বদ্ধতার উপকরণগুলোর বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করেছে। ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আক্তারুন্নাহার সাকি বলেন,

“সাধারণ মানুষকে সামাজিক দায়বদ্ধতার উপকরণগুলোর বিষয়ে সচেতন করার কাজটি কঠিন হওয়া সত্ত্বেও আমরা তা সফলভাবে সম্পন্ন করেছি।”

নিয়মিত অনুষ্ঠান ও বৈঠকের পাশাপাশি পঞ্চগড় ডিপিএফ তিনটি গুরুত্বপূর্ণ দিবস – জাতীয় যুব দিবস, দুর্নীতি প্রতিরোধ দিবস ও তথ্য অধিকার দিবস পালন করেছে বলেও জানান সাকি। বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও সর্বস্তরের নাগরিকদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত বৈঠকগুলোতে অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থা, জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল, সিটিজেন চার্টার ও তথ্য অধিকার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।


সাকি বলেন, তাদের লক্ষ্য ছিল এমন একটি মঞ্চ তৈরি করা, যেখানে নাগরিকরা বিভিন্ন সেবার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবেন।


ডিপিএফের বিভিন্ন বৈঠকে অংশগ্রহণকারীরা এখন সামাজিক দায়বদ্ধতার উপকরণগুলো সম্পর্কে জানেন।

“সেবা না পেলে কোথায় এবং কীভাবে অভিযোগ করতে হবে, এটি জানতে পেরে তারা দারুণ খুশি,”

বলছিলেন ফোরামের সভাপতি আলাউদ্দিন প্রধান। তাঁর মতে, এসব অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার পর সরকারি কর্মকর্তারাও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সেবার মান বৃদ্ধির বিষয়ে উৎসাহিত হয়েছেন।

“ডিপিএফের কার্যক্রমের ফলে জনসাধারণ এখন আমাদের কাছ থেকে আরো ভালো সেবা পাচ্ছে,”

বলছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. আজাদ হোসেন।


মোটকথা, স্থানীয় প্রশাসন ও জনসাধারণের সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টার মাধ্যমে পঞ্চগড়ের স্বাস্থ্যসেবা এখন উন্নতির পথে নতুন এক যাত্রা শুরু করেছে। ডিপিএফ সদস্যরা আশা করছেন, প্রকল্পের মেয়াদ এক বছরেরও বেশি বাড়ানো হবে।

“আমরা মাত্র দারুণ এই উদ্যোগের সুফল পেতে শুরু করেছি। আমরা চাই না, এখান থেকে অর্জিত শিক্ষা মানুষের অভ্যাসে পরিণত হওয়ার আগেই এই প্রকল্প শেষ হয়ে যাক।”
পঞ্চগড় জেলা ডিপিএফ সদস্যগণ ও ডিস্ট্রিক্ট ফ্যাসিলিটেটর
পঞ্চগড় জেলা ডিপিএফ সদস্যগণ ও ডিস্ট্রিক্ট ফ্যাসিলিটেটর

এই প্রকাশনাটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের আর্থিক সহায়তায় তৈরি। প্রকাশনার বিষয়বস্তুর দায়িত্ব প্ল্যাটফর্মস ফর ডায়ালগ প্রকল্পের। এটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতামতকে প্রতিফলিত নাও করতে পারে।

bottom of page