top of page

ডিজিটঅলঃ পিফরডির নারী কর্মীদের ডিজিটাল যাত্রা


লিংগ সমতা নিশ্চিত করতে ও নারীদের অবদানকে স্বীকৃতি দিতে প্রতি বছর পৃথিবী জুড়ে পালিত হয়ে আসছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস। বরাবরের মতো এ বছরও জাতিসংঘ নারী বিষয়ক সংস্থা ইউ এন উমেন দিবসটির একটি প্রতিপাদ্য ঘোষণা করেছে। প্রতিপাদ্যটি হচ্ছে 'ডিজিটঅলঃ লিংগ সমতায় উদ্ভাবন ও প্রযুক্তির অবদান'। এর মূল লক্ষ্য প্রযুক্তি কীভাবে নারী ক্ষমতায়নে ভূমিকা রাখছে সে বিষয়ে আলোকপাত করা। এ উপলক্ষ্যে পিফরডি প্রকল্প কয়েকজন নারী কর্মীর কাছে ডিজিটাল প্রযুক্তির সাথে খাপ খাওয়ানোর কৌশল এবং এই প্রযুক্তিগুলো কীভাবে তাদের স্বনির্ভর করছে সে বিষয়ে জানতে চায়।


কথা হচ্ছিলো পিফরডি প্রকল্পের আঞ্চলিক সমন্বয়ক শবনম মোস্তারির সাথে। নতুন কিছু শেখার ব্যাপারে কখনোই আগ্রহের ঘাটতি নেই তার। বিশেষ করে সেটা যদি হয় ডিজিটাল প্রযুক্তি। এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন যে করোনা মহামারির সময়টাতেই মূলত ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যাপারে তার ব্যাপক জানাশোনা হয়। শেখার অদম্য আগ্রহের কারনে নতুন সব প্রযুক্তির সাথে মানিয়ে নিতে বিশেষ কোন অসুবিধা হয়নি শবনমের।


ব্যাপারটা সবসময়ই যে এমন ছিলো তা নয়। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে মানুষের সামনে কথা বলতে সংকোচ হতো তার। ভয় পেতো, পাছে ভুল কিছু বললে লোকে হাসাহাসি করে। ধীরে ধীরে এসব ভয় কাটিয়ে বিভিন্ন ডিজিটাল প্লাটফর্মে মানুষের সামনে কথা বলা শুরু করেন তিনি। এখন নিয়মিত ফেসবুক, লিংকডইনের মতো সামাজিক গণমাধ্যমে নিজের মত প্রকাশ করে চলেছেন। সম্প্রতি তার এক সহকর্মী ফেসবুকে কাজ সংক্রান্ত বিষয়ে একটি পোস্ট করেন। শবনমের একজন পুরুষ সহকর্মী সেখানে এসে একটি অশোভন মন্তব্য করেন। তিনি সাথে সাথে সেই ব্যক্তিকে বিষয়টির নেতিবাচক দিকগুলো নিয়ে বলেন এবং সরিয়ে ফেলার করার অনুরোধ করেন। পরে সেই ব্যক্তি শবনমের সাথে একমত হয়ে মন্তব্যটি সরিয়ে নেন।


আঞ্চলিক সমন্বয়কের কাজের একটি বড় অংশ হচ্ছে বিভিন্ন অংশীদার এবং বন্ধু সংগঠনের মানুষের সাথে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ করা। কিন্তু করোনা মহামারির সময়টাতে এদের সবার সাথে সরাসরি দেখা করা সম্ভব ছিলো না। অন্য অনেক বিষয়ের মতো এ ব্যাপারটিতেও একটি উদ্ভাবনী সমাধান নিয়ে আসে পিফরডি প্রকল্পের কর্মীগণ। শবনম অনলাইনে যোগাযোগ করা শুরু করে সবার সাথে। জুম, ফেসবুক, চ্যাট কিংবা মাইক্রোসফট টিমসের মতো যোগাযোগ এপ্সের ব্যবহার শিখে নেন তিনি। যেমনটি বলছিলেন, 'এ ব্যাপারে কখনোই অস্বস্তি হয়নি আমার। বরং এখন আমার আত্মবিশ্বাস আরও বেড়ে গেছে। আমার সহকর্মীদের সাথে তাল মিলিয়ে আমিও এগুলো দক্ষতার সাথে ব্যবহার করতে পারছি।'



সাফল্যের সাথে সাথে বাধাও ছিলো। ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের কিছু ঝুঁকি আছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের নারীদের জন্য। পশ্চিমা দেশগুলোর মতো বাংলাদেশের নারীদের জন্য এ সব যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করাটা সাংস্কৃতিকভাবে অতোটা গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠেনি। ইন্টারনেটে হয়রানি, ব্ল্যাকমেইল, আক্রমণাত্মক ভাষার ব্যবহার, আর লিংগভিত্তিক সামাজিক বাধা অনলাইনে নারীদের অবাধ বিচরণে বাধা সৃষ্টি করে। তবে শবনম অবশ্য আগে থেকেই এ বিষয়ে সচেতন ছিলেন এবং সেজন্যই তিনি কিছু আগাম সাবধানতা অবলম্বন করেছেন। তা সত্ত্বেও অনলাইন দুনিয়ায় তার কিছু নেতিজবাচক অভিজ্ঞতা হয়। একজন প্রাক্তন সহকর্মী তাকে অনলাইনে হুমকি দেয়। সাথে সাথে শবনম তাকে অনলাইন মাধ্যমগুলোর বন্ধু তালিকা থেকে সরিয়ে দেন। তবে এসব কারনে ডিজিটাল প্রযুক্তি সম্পর্কে তার শেখা থেমে থাকে নি। এমনকি তিনি আশেপাশের অনেককেই এ বিষয়ে দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করছেন।


তিনি বলেন,


'এভাবেই প্রযুক্তি সম্পর্কে জানাশোনা আমাকে নিরাপদ থাকতে সহায়তা করছে। আমি সবসময়ই শিখছি, বিশেষ করে ডিজিটাল প্রযুক্তি। যখনই আমার কাছে কেউ এ বিষয়ে সাহায্য চায়, আমি সাথে সাথে তাকে সহায়তা দেবার চেষ্টা করি। কারণ আমি যত বেশি মানুষকে এ বিষয়ে শেখাবো, নিজেও ততো শিখবো। পারষ্পারিক সহযোগিতার মাধ্যমে এভাবেই এগিয়ে থাকা যায়।'

অনলাইনে নিজের একটি গ্রহণযোগ্য পরিচয় গড়ে তোলার ব্যাপারে সে খুবই আগ্রহী। এজন্য তিনি বিভিন্ন কোর্স, বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে শেখা এবং সবসময় একটি চর্চার ভেতরে থাকেন। চ্যাট জিপিটি, লিংকিডইন গুগলের মতো এমন আরও কিছু অনলাইন প্লাটফর্ম থেকে তিনি এ বিষয়ে সাহায্য নিচ্ছেন। তিনি বলেন, 'সবসময়ই অনলাইনে নিজেকে একজন অনুসরণীয় ও গ্রহণযোগ্য মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছি। যখন প্রয়োজন মনে করেছি চ্যাটজিপিটি, গুগল, লিংকডইনের মতো প্লাটফর্মগুলো থেকে অনেক কোর্স করেছি। এই পথ চলাতে নিজের পাশাপাশি আর দশজনকে সাহায্য করার ব্যপারে আমার একটি স্বপ্ন আছে। ডিজিটাল মার্কেটিং আর কন্টেন্ট বানানোয় আমার আগ্রহ এ ব্যাপারটিকে আরও বেগবান করেছে। এজন্যই সব কাজের পাশাপাশি আমি নতুন কিছু শেখার জন্য আলাদা একটু সময় রেখে দেই। কিন্তু বিষয়গুলো সব সময় যে সহজ হয় তা নয়। মাঝেমধ্যে মনে হয় আমি ঠিক পেরে উঠছি না। বিভিন্ন ব্যস্ততার কারনে একটা লম্বা সময় যদি বিরতি পরে যায়, সবকিছু আবার গোঁড়া থেকে শুরু করতে হয়। এ জিনিসটা ঠিক করতে হবে আমার।'


ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে নিজের শক্তিতে আত্মবিশ্বাসী হয়েছেন পিফরডির আরেক আঞ্চলিক সমন্বয়ক রেহানা বেগম। করোনা মহামারির সময় এতো এতো নতুন প্রযুক্তির সাথে খাপ খাইয়ে নিতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে তাকে। যেমনটি আগেই বলা হয়েছে, আঞ্চলিক সমন্বয়কের একটি বড় কাজ হচ্ছে অনেক মানুষের সাথে মেশা, কথা বলা। তবে কিছুটা চেষ্টা করেই সামলে নিতে পেরেছেন তিনি। বিভিন্ন অনলাইন টুলের মাধ্যমে মানুষের সাথে যোগাযোগ করতে পেরেছেন। তিনি বলেন, 'পিফরডিতে কাজ করার আগে ডিজিটাল প্রযুক্তি সম্পর্কে আমার অতো ভালো ধারণা ছিলো না। অনলাইনে আমাদের মিটিং, সেমিনার, কর্মশালাসহ আরও অনেক কিছুরই আয়োজন করতে হয়েছে। এছাড়াও আমরা অনলাইনে কয়েকটি সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন পরিচালনা করেছি। ক্যাম্পেইনগুলো দারুন ভাবে সফল হয়েছে।'

বিশ্বায়নের এই যুগে আমাদেরকে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন প্রযুক্তি আর ট্রেন্ড নিয়ে সজাগ থাকতে হবে। সাফল্য অর্জনের জন্য এর বিকল্প নেই। সে কারনেই রেহানা প্রতিদিন কমপক্ষে এক ঘন্টা ব্যয় করেন নতুন কিছু শিখতে। রেহানা দেখেছেন যে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার তার দৈনন্দিন কাজকর্মকে আরও সহজ করে দিয়েছে। তিনি অংশীদার প্রতিষ্ঠান আর সহকর্মীদেরকেও এ বিষয়ে সহায়তা করছেন।

'ফেসবুক, হোয়াটসএপ, জুম ইত্যাদি বিভিন্ন প্লাটফর্মের মাধ্যমে যোগাযোগ আমাদের কার্যক্রমকে আরও সহজ এবং ফলপ্রসূ করেছে। ডিজিটাল প্লাটফর্মগুলো ব্যবহারের কারনে অনেক কাজে আমাদের অর্থ ও সময়ের সাশ্রয় হচ্ছে। এমনকি আজকেও আমি নারী দিবস উদযাপনের ব্যাপারে অংশিদারদের সাথে একটি অনলাইন মিটিং করেছি।'
 

This publication was produced with the financial support of the European Union. Its contents are the sole responsibility of Platforms for Dialogue and do not necessarily reflect the views of the European Union.


13 views0 comments
bottom of page