top of page

তৃণমূল থেকে জাতীয় পর্যায়: পিফরডি জবাবদিহিতা এবং গণতান্ত্রিক স্বত্ব বৃদ্ধি করতে সুশীল সমাজ এবংসরক



সামাজিক আন্দোলনের একটি শক্তিশালী ইতিহাস রয়েছে বাংলাদেশের তবে তৃণমূল সুশীল সমাজ সংগঠন এবং ব্যক্তিদের খুব কমই জাতীয় পর্যায়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের সাথে নীতি সংলাপে জড়িত হওয়ার সুযোগ থাকে। কোনো দেশই জাতীয় ইস্যু নিয়ে খোলামেলা সংলাপ করতে পারে না যদি অংশগ্রহণ ক্ষমতাবানদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। প্ল্যাটফর্ম ফর ডায়ালগ (পিফরডি) এ বিষয়ে পরিবর্তন আনার জন্য কাজ করে যাচ্ছে।


প্রকল্পের শুরু থেকেই পিফরডি সুশীল সমাজের সদস্য এবং প্রশাসনের সকল স্তরের সরকারি কর্মকর্তাদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করছে যাতে তারা কার্যকরভাবে নীতি সংলাপে অংশগ্রহণ করতে পারে। এই প্রক্রিয়া একটি গণতান্ত্রিক জাতি হিসেবে বাংলাদেশের উন্নয়নের পরিপূরক হিসেবে কাজ করা ছাড়াও দেশজুড়ে ছড়িয়ে থাকা অভিমত এবং অভিজ্ঞতাকে স্বীকৃতি দেবে। শুরু থেকেই, পিফরডি ২১ টি জেলার সুশীল সমাজ সংগঠনের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং তাদের মূল সামাজিক জবাবদিহি উপকরণসমূহের ওপর দক্ষ করে তুলতে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কাজ করেছে। এর ফলে জনসেবা, তথ্য বা শুদ্ধাচার কৌশলের মতো মৌলিক নাগরিক অধিকার নিয়ে জ্ঞান অর্জন ছাড়াও তারা তাদের কমিউনিটির কল্যাণে এই উপকরণসমূহ ব্যবহার করতে পারবে। পিফরডি স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সাথেও কাজ করেছে। এর লক্ষ্য হচ্ছে সরকারি পরিষেবা প্রদানকারীরা যাতে সঠিকভাবে তাদের কর্তব্য পালন করেন এবং কীভাবে তথ্য অধিকার, সেবা প্রদান প্রতিশ্রুতি এর মতো সামাজিক জবাবদিহি উপকরণসমূহের মাধ্যমে নাগরিকদের চাহিদা পূরণ প্রক্রিয়া আরও সক্রিয় করা যায় তা নিশ্চিত করেন।


পিফরডি শুধুমাত্র সুশীল সমাজ সংগঠন এবং তাদের উপকারভোগীদের সামাজিক জবাবদিহি উপকরণগুলো সম্পর্কে প্রশিক্ষিত করেনি বরং স্থানীয় সরকারের সাথে সামাজিক দায়বদ্ধতার বিষয়ে অর্থপূর্ণ সংলাপে জড়িত হতে তাদের সহায়তা করেছে। এর ফলস্বরূপ তারা বাল্যবিবাহ, শিক্ষার মান, কমিউনিটি ক্লিনিকগুলিতে অভিগম্যতা এবং স্থানীয় পর্যায়ে আরও অনেক সমস্যা সমাধানে স্থানীয় প্রশাসনের সাথে সহযোগিতা করতে উদ্বুদ্ধ হয়েছে। পিফরডি-এর অংশীদারি প্রতিটি কমিউনিটি তাদের অধিকার আদায়ে জবাবদিহি উপকরণসমূহ ব্যবহার করার কার্যকর উপায় খুঁজে পেয়েছে। স্থানীয় নাগরিকরা সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি সম্পর্কে আরও ভালভাবে জানতে পেরেছে এবং অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থা ব্যবহার করে অভিযোগ দায়ের করার মাধ্যমে নাগরিকদের ক্ষমতায়ন হয়েছে৷

অংশীদারি সুশীল সমাজ সংগঠনগুলো মাল্টি-অ্যাক্টর পার্টনারশিপ (এমএপি) দল এর সদস্যদের মাধ্যমে বেশ কয়েকটি সামাজিক অ্যাকশন প্রকল্প (এসএপি) বাস্তবায়ন করেছে। এর লক্ষ্য ছিল নাগরিকদের সচেতনতা বাড়ানো, প্রয়োজনে তাদের সহায়তা করা এবং নাগরিক কর্তব্য সংশ্লিষ্ট একটি সচেতন গোষ্ঠী গড়ে তোলা। এটি ছিল পিফরডি এর প্রচেষ্টার একটি অংশ।


পিফরডি স্থানীয় পর্যায় থেকে জেলা পর্যায়ে কাজ শুরু করেছে এবং ১২ টি জেলা নীতি ফোরাম (ডিপিএফ) গঠন করেছে। পিফরডি-এর বিবর্তনের এই পদক্ষেপটি জেলা-ভিত্তিক গোষ্ঠী তৈরি করেছে। ডিপিএফ গুলো জেলা-স্তরের সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ভিত্তিক সমস্যা বেছে নিয়েছে। পিফরডি একই সাথে বাংলাদেশ লোক-প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (বিপিএটিসি), জাতীয় স্থানীয় সরকার ইনস্টিটিউট (এন আইএলজি) এবং বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস প্রশাসন একাডেমি (বিসিএসএএ) এর মতো বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক অংশীদারদের সাথে কাজ করছে। এই প্রচেষ্টা জেলা তথ্য অফিসার এবং জেলা প্রশাসকদের মতো কর্মকর্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হচ্ছে যাতে তারা নাগরিকদের সহায়তা করতে এবং তাদের অনুরোধে কার্যকরভাবে সাড়া দিতে পারেন। প্রকল্পের এই পর্যায়টি ডিপিএফ-গুলোকে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু বৃহত্তর প্ল্যাটফর্মে তুলে ধরতে এবং দায়িত্ব প্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং সক্রিয়তা নিশ্চিত করতে সাহায্য করেছে। ডিপিএফ সদস্য এবং জেলা-স্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে সংলাপ সচেতনতা বাড়াতে সাহায্য করেছে এবং বাল্যবিবাহ বন্ধ, মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রদান এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের উন্নতিতে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপকে তরান্বিত করেছে। জেলা-স্তরের কার্যক্রমের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা থেকে ন্যাশনাল থিম্যাটিক ফোরাম (এনটিএফ) গঠন করা হয়েছে যেখানে পিফরডি-এর ডিপিএফ-গুলো তিনটি মূল ইস্যুকে জাতীয় পর্যায়ের সংলাপে নিয়ে এসেছে।


২০২২ সালের অক্টোবর এবং নভেম্বরে, পিফরডি তিনটি জাতীয় সংলাপ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। সংলাপের বিষয়গুলো ছিল বাল্যবিবাহ, কমিউনিটি ক্লিনিক এবং মানসম্পন্ন শিক্ষা। এই আয়োজন আপাত দৃষ্টিতে সাধারণ মনে হলেও বাস্তবে এটি ছিল সক্ষমতা বৃদ্ধি, অ্যাডভোকেসি প্রশিক্ষণ এবং কমিউনিটি সংহতিকরণে বহু বছরের প্রচেষ্টার চুড়ান্ত ফলাফল । মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তাদের কাছে এই মূল বিষয়গুলো নিয়ে তাদের উদ্বেগ তুলে ধরতে প্রথমবারের মতো উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের সুশীল সমাজ সংগঠনগুলোর স্থানীয় প্রতিনিধিরা পিফরডি-এর সাথে কাজ করেছে।

বিশেষ অতিথিদের সূচনা বক্তৃতার মাধ্যমে প্রতিটি সংলাপ অনুষ্ঠান শুরু হয়। এর পর এনটিএফ-এর পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ-এর গবেষকবৃন্দ প্রাথমিক সমস্যা, কারণ এবং সম্ভাব্য সমাধান উল্লেখ করে সংলাপের বিষয়বস্তুর ওপর একটি সংক্ষিপ্ত পজিশন পেপার উপস্থাপন করেন। উপস্থাপনার পর পজিশন পেপারের বিষয়বস্তুর ওপর স্বতঃস্ফূর্ত আলোচনা হয় যেখানে অংশগ্রহণকারীরা তাদের মতামত প্রকাশ করেন, এবং প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে বিষয়বস্তু সম্পর্কে গভীরভাবে জানার চেষ্টা করেন। প্রতিটি জেলার ডিপিএফ সভাপতিরাও তাদের কমিউনিটির সমস্যাগুলি স্থানীয় প্রেক্ষাপটে আলোচনা করেন। নীতিনির্ধারকরা উৎসাহের সাথে সংলাপে অংশ নেন যার মাধ্যমে সমস্যাগুলির কারণ চিহ্নিত হয়। তারা বিভিন্ন সমাধানের প্রস্তাব দেন যা জাতীয় ও জেলা পর্যায়ে কার্যকর হতে পারে।


সংলাপে শুধু ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা, নীতিনির্ধারক এবং ডিপিএফ প্রেসিডেন্টদের কথা বলার সুযোগ ছিল না, এনটিএফ সদস্যদেরাও মাইক্রোফোনে তাদের কমিউনিটির গল্প সবার সামনে তুলে ধরেন। এই সক্রিয় অংশগ্রহণে এনটিএফ-এর স্থানীয় কাজের প্রভাব উঠে এসেছে এবং অংশগ্রহণকারীদের বুঝতে সাহায্য করেছে যে এই সমস্যাগুলি মানুষের জীবনকে কতটা গভীরভাবে প্রভাবিত করে। মানবিক গল্পগুলো নীতিগত বিষয়কে এমনভাবে তুলে আনে যা পরিসংখ্যান এবং আইনি কাঠামো সহজভাবে করতে পারে না। এই গল্পগুলো জাতীয় পর্যায়ে প্রচার হলে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীরা আরও মানব-কেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে চিন্তা করতে সক্ষম হন।


সুশীল সমাজের সদস্য এবং নীতিনির্ধারকদের উদ্ভাবনী চিন্তায় উন্মুক্ত সংলাপ এবং আলোচনা অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছে। প্রতিটি আয়োজনে অংশগ্রহণকারীরা সমস্যাগুলো সমাধানের পক্ষে আন্তরিক সমর্থন জানিয়েছেন। প্রধান লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় সময় এবং কার্যক্রমের ব্যাপারে উভয় পক্ষই ঐক্যমতে পৌঁছেছেন। সরকার এনটিএফ-এর প্রতিবেদনকে গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করেছে এবং সমস্যা সমাধানে সুশীল সমাজ ও এনটিএফ সদস্যদের সাথে সমন্বয়ের জন্য সম্মত হয়েছে। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে খোলামেলা মিথস্ক্রিয়া সকলের জন্য উৎসাহব্যাঞ্জক ছিল এবং প্রত্যেকেই বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে, কমিউনিটি ক্লিনিকগুলিতে অভিগম্যতা উন্নত করতে এবং বাংলাদেশের শিশু ও তরুণদের মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রদানে আন্তরিক আগ্রহ দেখিয়েছেন।

জাতীয় সংলাপ শেষে বেশিরভাগ অংশগ্রহণকারী আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে সুশীল সমাজ এবং সরকারি সংস্থাগুলির মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করলে সমস্যা মোকাবেলা করা আরও তরান্বিত হবে। এটি অনস্বীকার্য যে এনটিএফ সদস্য এবং সরকারী কর্মকর্তারা একইভাবে এই সমস্যাগুলি দ্রুত এবং পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সমাধান করার জন্য আরও পদক্ষেপ নিতে অনুপ্রাণিত হয়েছেন। সংলাপ অনুষ্ঠানের পর এনটিএফ সদস্যদের মধ্যে একটি প্রতিফলন সভা অনুষ্ঠিত হয় যেখানে তারা তাদের প্রতিক্রিয়া, মতামত এবং ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেন। কিছু অংশগ্রহণকারী মতামত দেন যে স্থানীয় সুশীল সমাজের নেতাদের আলোচনার জন্য পর্যাপ্ত সময় ছিলনা, বিশেষ করে যারা শুধুমাত্র অনলাইনে যোগদান করতে পেরেছেন। তবে বেশিরভাগ অংশগ্রহণকারীই আলোচনায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। অনেক এনটিএফ সদস্য বলেছেন যে যদিও পিফরডি প্রকল্প শেষ হবার সময়সীমা এগিয়ে আসছে, তাদের কাজ সবেমাত্র শুরু হচ্ছে। বেশ কিছু ডিপিএফ স্বাধীনভাবে তাদের কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য কর্মপন্থা নির্ধারণ করেছে এবং কমিউনিটির উন্নয়নে সক্রিয় থাকার পরিকল্পনা নিয়েছে। অধিকাংশ অংশগ্রহণকারী আশা করেন যে ভবিষ্যতে যদি আরও জাতীয় সংলাপ হয়, সেগুলো একদিনের চেয়ে বেশি সময় ধরে চলবে কারণ জটিল সমস্যা সমাধানের জন্য আরও সময় এবং মনোযোগ প্রয়োজন। সবশেষে, সকল অংশগ্রহণকারীরা জাতীয় পর্যায়ের নীতি নির্ধারকদের সাথে সংযোগ স্থাপন এবং বিভিন্ন সরকারী মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সাথে কাজের সম্পর্ক গড়ে তোলার সুযোগের প্রশংসা করেন।


উপজেলা ও জেলা পর্যায় থেকে সুশীল সমাজের সদস্য এবং জাতীয় পর্যায়ের নীতিনির্ধারকদের একত্রে যোগদান এবং ইস্যুভিত্তিক আলোচনার জন্য একই মঞ্চে সবার অংশগ্রহণ নিজেই একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ। গণতন্ত্রে অবশ্যই এমন সুযোগ তৈরি করতে হবে যেখানে তৃণমূল থেকে জাতীয় পর্যায়ের নেতারা একে অপরের সাথে সম্মানজনক, সৎ এবং গঠনমূলক পরিবেশে কথা বলতে পারেন। জাতীয় সংলাপে আলোচনা করা নীতিগত বিষয়গুলো সমাধান করার একমাত্র উপায় হল সকলে একসঙ্গে কাজ করা।


এই প্রকাশনাটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের আর্থিক সহায়তায় তৈরি। প্রকাশনার বিষয়বস্তুর দায়িত্ব

প্ল্যাটফর্মস ফর ডায়ালগ প্রকল্পের। এটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতামতকে প্রতিফলিত নাও করতে পারে।

40 views0 comments
bottom of page