top of page

নাগরিক সনদ: সরকারী পরিষেবা পাওয়ার পথ সহজতর করছে


নাগরিক সনদ বা সিটিজেনস চার্টার হল একটি সংক্ষিপ্ত সরকারী নথি যা সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তর দ্বারা প্রদত্ত পরিষেবা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেয়। এটি একটি সামাজিক জবাবদিহি নীতিমালা যা নাগরিকদের সরকারি পরিষেবাগুলো বুঝতে সাহায্য করার জন্য তৈরি করা হয়েছে যাতে তারা তাদের স্থানীয় সরকারী অফিস থেকে পরিষেবাগুলি সম্পূর্ণ অবহিত হয়ে অধিকারের সঙ্গে দাবী করতে পারেন। নাগরিক এবং সরকারী কর্মকর্তাদের দ্বারা যৌথভাবে তৈরি করা নাগরিক সনদ, উপলব্ধ পরিষেবাগুলি ব্যাখ্যা করে এবং কীভাবে সেগুলি পেতে হয় এবং একইসাথে অভিযোগের পদ্ধতি এবং কীভাবে পরিষেবা ব্যবস্থায় ত্রুটিগুলি সংশোধন করা যায় তার উপায় প্রদর্শন করে। বাংলাদেশে নাগরিক সনদ ২০০৭ সালে প্রবর্তিত হয়। তারপর থেকে এটি কার্যকর করার জন্য অনেক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।


তৃণমূল পর্যায়ে সুশীল সমাজ সংস্থার (সিএসও) সাথে প্ল্যাটফর্ম ফর ডায়ালগের অংশীদারিত্বের মাধ্যমে, ২১টি জেলা জুড়ে ৬৩ টি ইউনিয়নে সিটিজেন চার্টার স্থাপন করা হয়েছে। আমরা নাগরিক সনদের ওপর সুশীল সমাজ সংস্থা এবং সরকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রশিক্ষণ প্রদান করেছি যাতে সরকারী কর্মকর্তা এবং স্থানীয় কমিউনিটি উভয়ই একটি অর্থবহ এবং কার্যকর উপায়ে এই নীতিমালার সাথে জড়িত হতে পারে। আসুন আমাদের একজন অংশীদারি সিএসও বটছায়া সমাজকল্যাণ সমিতি এবং নাগরিক সনদের ওপর তাদের কজের গল্পটি শুনি।


পেশায় কৃষক হলেও দেলোয়ার হোসেন নিবেদিতপ্রাণ একজন সমাজকর্মী। ২০০১ সালে এলাকার কয়েকজন তরুণকে সাথে নিয়ে সুনামগঞ্জের কারেন্টের বাজার গ্রামে বটছায়া সমাজকল্যাণ সমিতি নামের একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। তারা গ্রামীণ জীবনে নেতিবাচক প্রভাব বিস্তারকারী সামাজিক সমস্যাগুলো দূর করার সিদ্ধান্ত নেন। “গ্রাম থেকে বাল্যবিবাহ, মাদকাসক্তি ও বেকারত্বের মত সমস্যাগুলো কৌশলে দূর করাই আমাদের লক্ষ্য,” বলছিলেন তিনি।


গত দুই দশকে সমাজ উন্নয়নমূলক কাজের মধ্য দিয়ে বহু গ্রামবাসীর জীবন বদলে দিয়েছে সংগঠনটি। বৃত্তিমূলক কাজের প্রশিক্ষনের দেয়ার পাশাপাশি তারা শিক্ষার প্রসার ও সমাজ উন্নয়নে কাজ করেন। “সবজি চাষ ও গরুর খামার করার প্রশিক্ষণ দিয়ে আমরা ৭০০ যুবককে স্বাবলম্বী করে তুলেছি। মহিলারা জামা-কাপড় সেলাই করা শিখেছেন। বেশ কয়েকজন গরিব মানুষকে স্বাবলম্বী করে তুলতে রিকশা বা ভ্যান কিনে দিয়েছি,” বলছিলেন সংগঠনের গর্বিত সদস্য কাঠমিস্ত্রী আব্দুর রশীদ। তিনি জানান, তাদের সংগঠন একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ও পরিচালনা করে। সেখানে গরিব ছাত্রদেরকে বিনা বেতনে পড়ানো হয়।



দেলোয়ার জানান, তাদের মূল লক্ষ্য ছিল বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করা। তাই তারা গ্রামবাসীর জন্য শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার প্রতি মনোযোগ দেন। তিনি ব্যাখ্যা করেন, “যথেষ্ট টাকা-পয়সা আয় করা একজন বাবা উন্নত জীবনের আশায় মেয়েকে কম বয়সে বিয়ে দেবেন না। ঠিক একইভাবে, একজন শিক্ষিত সন্তান পরিবারের সম্পদ হিসেবে বেড়ে উঠবে। এতে সমাজে বাল্যবিবাহ বলতে কিছু থাকবে না।”


সংস্থাটি ব্রিটিশ কাউন্সিলের প্ল্যাটফর্মস ফর ডায়লগের (পিফরডি) কৌশলগত সহযোগী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে ও বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের সহায়তায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ব্রিটিশ কাউন্সিল। পিফরডির সাথে বটছায়া সমাজকল্যাণ সমিতি কমিউনিটি ক্লিনিক, বাল্যবিবাহ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও মাদকাসক্তি বিষয়ক সোশ্যাল অ্যাকশন প্রজেক্ট (এসএপি) বাস্তবায়ন করেছে।


পলাশ ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আমেনা আখতার। তিনি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ক এসএপিটি পরিচালনা করেছেন। এলাকার মানুষকে সুস্থ রাখতে সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা জরুরি বলে মনে করেন তিনি। “সুনামগঞ্জ বন্যাপ্রবণ এলাকা হওয়ায় ডায়রিয়া, কলেরাসহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগ এখানকার মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়েছে। তাই আমরা বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ওয়াটার, স্যানিটেশন অ্যান্ড হাইজিন (ওয়াশ) প্রকল্পের কাজ করি।” তিনি আরো জানান, সুষ্ঠু পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে তারা সরকারি কর্মকর্তা ও স্থানীয় বাসিন্দাদেরকে নিয়ে বৈঠকের আয়োজন করেন।


আরেক মাল্টি অ্যাক্টর পার্টনার (এমএপি) হোসেন বশির কমিউনিটি ক্লিনিক নিয়ে কাজ করেছেন। এলাকার স্বাস্থ্যসেবা অপ্রতুল বলে মনে করেন তিনি। তাই তিনি এ সমস্যা নিরসনে কাজ করতে আগ্রহী হন। তিনি ও তার কর্মীবাহিনী স্থানীয় বাসিন্দা, স্বাস্থ্যকর্মী ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদেরকে নিয়ে কয়েকটি শোভাযাত্রা ও বৈঠকের আয়োজন করেন। ফলে, স্বাস্থ্যসেবার অধিকার নিয়ে এলাকাবাসী বেশ সচেতন হয়ে ওঠেন। তিনি বলেন,


সবারই বিনামূল্যে সরকারি স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার অধিকার আছে। বিনামূল্যে বিতরণের জন্য সরকার ২৯ ধরণের ওষুধ দিয়েছে। রোগীদের কাছ থেকে ফি নেয়ার ক্ষেত্রেও কিছু নিয়ম-কানুন আছে। এসব অনেকেরই জানা ছিল না। তাই আমরা সিটিজেন চার্টার স্থাপন, লিফলেট বিতরণ করার পাশপাশি জনগণকে তাদের প্রাপ্য সেবা সম্পর্কে জানানোর ব্যবস্থা করেছি।

এসএপিগুলোর মাধ্যমে বটছায়া সমাজকল্যাণ সমিতি বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার প্রায় ৯০০ মানুষের কাছে তাদের সেবা পৌঁছে দিয়েছে। সংস্থাটি এই প্রথমবারের মত কোন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সাথে যৌথভাবে কাজ করেছে। প্রকল্পের ফলাফলে দারুণ খুশি সমিতির সভাপতি দেলোয়ার। “আমরা একই সাথে একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান এবং সরকারের সাথে কাজ করেছি। এটা আমাদের জন্য সম্পূর্ণ নতুন এক অভিজ্ঞতা। এই এলাকার মানুষের জন্যও এসএপিগুলো নতুন একটা অভিজ্ঞতা ছিল।”


bottom of page