top of page

নাগরিকদের স্বনির্ভরতা বৃদ্ধিতে নারীর ক্ষমতায়ন এবং নাগরিক সনদের ব্যবহার

Updated: Aug 1, 2021


গণতন্ত্রে জনগণ থাকে ক্ষমতার কেন্দ্র বিন্দুতে। জনগণ সরকার নির্বাচিত করে এবং সরকার জনগণের কাছে দয়বদ্ধ থাকে। এটাই সুশাসনের নীতিগত ভিত্তি। নাগরিক সনদ বা সিটিজেন’স চার্টার সুশাসনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ। সরকারি সেবা সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের মোক্ষম হাতিয়ার। সিটিজেন’স চার্টার একটি সামাজিক জবাবদিহি নীতিমালা যা বিভিন্ন সরকারী দপ্তরে সেবা গ্রহণকারী জনগণকে সেবা সম্পর্কে অবহিত এবং ক্ষমতায়িত করে। এর মূল উদ্দেশ্য হল জবাবদিহিতা, স্বচ্ছতা এবং মানসম্পন্ন সরকারী সেবা নিশ্চিত করা। একটি গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ হিসেবে সিটিজেন’স চার্টারে সেবার মান, প্রাপ্তির নিশ্চয়তা এবং প্রতিশ্রুতি উল্লেখ করা থাকে।


প্ল্যাটফর্মস ফর ডায়ালগ (পিফরডি) প্রকল্পের অংশীদারি তৃনমূল সুশীল সমাজ সংগঠনের (সিএসও) মাধ্যমে ২১ টি জেলার ৬৩ টি ইউনিয়নে সিটিজেন’স চার্টার স্থাপন করা হয়েছে। এর সঠিক ও ফলপ্রসূ ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সিএসও এবং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে আমরা প্রশিক্ষণও দিয়েছি। আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় স্বাধীন ও আত্মবিশ্বাসের সাথে সরকারী সেবা দাবী করা এবং প্রাপ্তিতে নাগরিকদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত হয়েছে। নীচে পটুয়াখালীর এমনই একটি গল্প তুলে ধরা হলঃ


তথ্য অধিকার স্বনির্ভরতা নিশ্চিত করে- নারী অধিকার কর্মী মাহফুজা ইসলাম, যার হাত ধরে প্রতিষ্ঠা লাভ করে শুকতারা মহিলা সংস্থা, নিজস্ব অভিজ্ঞতা থেকেই এটি জানেন। নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা লাভ করে তিনি ১৯৯৫ সালে পটুয়াখালী জেলায় এই নারী সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন। খুব অল্প বয়সেই মাধ্যমিক পাশের পর পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়ে যায় তার। বাংলাদেশে বাল্যবিবাহের শিকার বেশিরভাগ মেয়েকেই পড়াশোনা ছেড়ে দিতে হয়। তবে, মাহফুজার শ্বশুরবাড়ি থেকে তার উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ব্যাপারে কোনো বাধা ছিল না। “আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই বাল্যবিবাহের ক্ষতিকর প্রভাব জানা ছিল। তাই আমরা আমাদের সব সামাজিক কর্মকান্ড উৎসর্গ করেছি নারীদের অধিকার ও কল্যাণ প্রতিষ্ঠায়,” বলছিলেন মাহফুজা।


নারী নির্যাতন রোধে, নারীশিক্ষার পক্ষে এবং বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে শুকতারা মহিলা সংস্থা পটুয়াখালীর প্রথমসারির এক ইস্পাত কঠিন সংগঠন। সরকারের পাশাপাশি এ সংগঠন ইউএসএইড ও ড্যানিডাসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে নারী অধিকার ও কর্মসংস্থান নিয়ে কাজ করেছে। হাজারো অসহায় নারীকে ন্যায়বিচার পেতে সাহায্য করেছে মাহফুজার সংগঠন। তিনি জানান, “আমরা নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে এবং নারী অধিকার রক্ষার্থে আইনী সহায়তা দিয়ে থাকি। এটাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য।”


প্ল্যাটফর্মস ফর ডায়লগের (পিফরডি) কৌশলগত সহযোগী হিসেবেও কাজ করেছে শুকতারা মহিলা সংস্থা। ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে এবং বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের সহায়তায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ব্রিটিশ কাউন্সিল। সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংস্থাটি পিফরডির অপর্যাপ্ত সরকারি সেবা, শিক্ষার মান ও সুষ্ঠু স্যানিটেশন ব্যবস্থা বিষয়ক তিনটি সোশ্যাল অ্যাকশন প্রজেক্ট (এসএপি) বাস্তবায়ন করেছে।


স্থানীয় সরকারি প্রতিষ্ঠানের সেবামান উন্নত করার এসএপি পরিচালনা করেন স্বেচ্ছাসেবী শহিদুল ইসলাম। তার সহযোগীরা খোঁজ নিয়ে দেখেন যে, অধিকাংশ সরকারি প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতির মূল কারণ হলো, সাধারণ মানুষের কাছে সঠিক তথ্যের অভাব।


“অফিসগুলোতে সিটিজেন চার্টার না থাকায় লোকজন স্বাভাবিকভাবেই দালালদের ওপর নির্ভর করে। ফলে, অবৈধ আয় ও দুর্নীতির সুযোগ তৈরি হয়। তাই আমরা ইউনিয়ন ও উপজেলা পরিষদ অফিসে সিটিজেন চার্টার স্থাপন করেছি।”

মানুষ এখন সিটিজেন চার্টারের মাধ্যমে সহজেই তথ্য যাচাই করে নিতে পারে। তাদেরকে আর দালালদের শরণাপন্ন হয় না।


বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ক এসএপির পরিচালক আফরোজা। তিনি দেখতে পান যে, সরকারের পয়ঃনিষ্কাশন প্রকল্পগুলোর সুবিধা না পৌঁছানোয় গ্রামের বেশিরভাগ বাড়িতেই সুষ্ঠু পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নেই। “সঠিক অবকাঠামো না থাকায় মানুষ স্থানীয় পদ্ধতিতে ময়লা পরিষ্কার করে। এতে রোগ-জীবানু ছড়ায়। তাই এই এসএপিতে আমরা সুষ্ঠু স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করার কাজ করেছি।” তিনি আরো জানান, গণশুনানিতে এলাকাবাসী ও জনপ্রতিনিধিদের অংশগ্রহনের ফলে মানুষ পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে সচেতন হয় এবং অবকাঠামো উন্নয়নের দাবিও জোরালো হয়।



মাহফুজা মনে করেন, তার ছাত্র স্বেচ্ছাসেবীদের পরিশ্রমের ফলেই এসএপিগুলো সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। কারণ, এ ধরনের কাজে তারা বেশ অভিজ্ঞ। তিনি বলেন, “নারীকেন্দ্রিক সংগঠন হওয়ায় সমাজে বৈষম্যমূলক সেবার ক্ষতিকর প্রভাব আমাদের জানা আছে। পিফরডির কল্যাণে আমাদের নারী উন্নয়ন কেন্দ্রিক কার্যক্রম পুরো সমাজে প্রতিফলিত হয়েছে।”


এই গল্পের মাধ্যমে সহজেই প্রমাণিত হয় যে সিটিজেন’স চার্টার জবাবদিহি নীতিমালার গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে সরকারী সেবা প্রদান এবং প্রদেয় সেবার মান নিশ্চিত করতে একটি মাপকাঠি হিসেবে কাজ করে। তথ্য অধিকার আইন বাস্তবায়ন, সেবা প্রদানের ফলপ্রসূতা নিশ্চিত করতে নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন এবং সামাজিক জবাবদিহি নীতিমালার পরবর্তী কর্মপন্থা নির্ধারণে সিটিজেন’স চার্টার সরকারী কর্মকর্তা এবং নাগরিকদের জন্য সহায়ক ভূমিকা রাখে।

bottom of page