top of page

নিজের তথ্য পাওয়ার অধিকার সম্পর্কে জানুন!


আপনি জানেন কী, সরকারী এবং বেসরকারী প্রতিষ্ঠান থেকে আপনার তথ্য চাওয়ার ও পাওয়ার অধিকার আছে?


সব নাগরিকেরই সরকারী এবং বেসরকারী প্রতিষ্ঠান থেকে তথ্য চাওয়ার ও স্বচ্ছতার সাথে পাওয়ার অধিকার আছে। সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য তথ্য প্রবাহ অবাধ করতে ২০০৯ সালে বাংলাদেশ তথ্য অধিকার আইন প্রণয়ন করে। তথ্য পাওয়ার অধিকার মুক্ত চিন্তা, নীতিবোধ এবং মুক্ত প্রকাশের স্বাধীনতার গুরুত্বপূর্ণ অংশ।


প্ল্যাটফর্মস ফর ডায়ালগ (পিফরডি) তথ্য অধিকারকে সামাজিক জবাবদিহি নীতি হিসেবে প্রচার করে যাতে নাগরিকরা সরকারী এবং বেসরকারী প্রতিষ্ঠান থেকে তথ্য পাওয়ার বৈধ অধিকার পায়। পিফরডি তৃণমূল সুশীল সমাজ সংগঠনদের (সিএসও) সাথে নিয়ে সামাজিক অ্যাকশন প্রকল্প (এসএপি) বাস্তবায়ন ও কমিউনিটি ফোরামের মাধ্যমে তথ্য অধিকার নিয়ে কাজ করেছে। কমিউনিটিতে প্রচারের জন্য আমরা সিএসও দের তথ্য অধিকারের ওপর প্রশিক্ষণ দিয়েছি। এছাড়াও এই নীতির মাধ্যমে তথ্য চাইলে নাগরিকদের তথ্যসেবা দেওয়ার ওপর সরকারী কর্মকর্তাদেরকেও প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।


পিফরডি’র অংশীদারি সিএসও লিট্ল স্টার ক্লাব বান্দরবানে তথ্য অধিকার নিয়ে কাজ করছে। থু শিং প্র্রু, একজন স্কুল শিক্ষক, ১৯৯৩ সালে সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন যা ১৯৯৮ সালে সমাজসেবা অধিদপ্তরের নিবন্ধন পায়। ছোট্ট ক্লাব থেকে একটি সমাজ উন্নয়নমূলক সংস্থায় রূপান্তরিত হওয়ার কথা বলতে গিয়ে স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েন থুই শিং। বর্তমানে বান্দরবান সদর উপজেলার রাজভীলা ইউনিয়নের বাসিন্দাদের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য সংগঠন হয়ে উঠেছে লিট্ল স্টার ক্লাব। এখান থেকে অন্তত ২,৫০০ মানুষ সরাসরি সুবিধা ভোগ করছেন।


সমাজ উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে অভিজ্ঞ হওয়ায় একটি নাগরিক সংগঠন হিসেবে ব্রিটিশ কাউন্সিলের পিফরডি’র সাথে কাজ করার সুযোগ পেয়েছে লিট্ল স্টার ক্লাব। ক্লাবটি গণশুনানী, অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থা বা তথ্য অধিকার এবং স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ক তিনটি এসএপি বাস্তবায়ন করছে। অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থা বিষয়ক এসএপি পরিচালনা করেন ইউ শিং হ্যা নুই। তিনি ও তার সহযোগীরা জনসাধারণের সরকারি সেবা না পাওয়ার ব্যাপারে অভিযোগ দায়ের ও যেকোনো তথ্যের জন্য আবেদন করা সম্পর্কে সচেতনতা তৈরিতে কাজ করেছেন। ইউ শিং বলেন,


“আমরা সাধারণ মানুষকে অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থা ও তথ্য অধিকার কী এবং এগুলো কীভাবে আমাদের কাজে লাগে, তা বোঝানোর চেষ্টা করি। সবশেষে, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে আমরা রাজভীলা ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে একটি সিটিজেন চার্টার স্থাপন করি।”

স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ক এসএপির পরিচালক ববন থ্যানচ্যাং য়্যা জানান, তার সহযোগীরা কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্যকর্মী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে ছোট ছোট বৈঠক করেছেন।


ববন বলেন, “এখানকার কমিউনিটি ক্লিনিকের নানারকম সমস্যা। তবে প্রধান সমস্যাটা হলো, এই ক্লিনিক এমন এক জায়গায়, যেখানে কেউ যায় না। এটা বেশ দূরে পাহাড়ের ওপর। স্বাস্থ্যকর্মীরাও কালেভদ্রে সেখানে যান। সেখানকার সেবার ব্যাপারেও এলাকার মানুষের তেমন ধারণা নেই।”


“সমস্যাগুলো চিহ্নিত করার পর আমরা এলাকাবাসী, স্বাস্থ্যকর্মী এবং সরকারি কর্মকর্তাদেরকে নিয়ে বৈঠকের আয়োজন করি। এখন কমিউনিটি ক্লিনিকটি বেশ ভালোভাবেই চলছে।” এছাড়াও, জনসাধারণের জন্য স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীর ফোন নাম্বার উন্মুক্ত করে দেয়া হয়, যেন অফিসের সময় ছাড়াও যেকোন সময় জরুরি প্রয়োজনে মানুষ সেবা নিতে পারেন।


ক্যায়া থ্যি মং পরিচালিত গণশুনানী বিষয়ক এসএপির মূল লক্ষ্য ছিল মানুষের গুণগত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা। এ কাজে তিনি দারুণ সফল বলে জানান মং। তিনি বলেন, “এসএপিতে আমরা মূলত একটা সাধারণ প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলি, যার মধ্য দিয়ে সাধারণ মানুষ এবং স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তারা উভয়পক্ষের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে পারেন।”


আমরা তিনটি গণশুনানীর আয়োজন করি। সেখানে স্বাস্থ্য, কৃষি, মৎস্য ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। এই কাজে তারা সবাই বেশ সফল হন।”



সামাজিক জবাবদিহি নীতিমালার ব্যবহার এবং নাগরিক ও সরকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে স্বচ্ছ অবাধ তথ্য প্রবাহ নিশ্চিত করে লিট্ল স্টার ক্লাব কমিউনিটিতে যে পরিবর্তন নিয়ে এসেছে তা প্রমাণ করে যে সামাজিক জবাবদিহি নীতিমালা সব কমিউনিটির জন্য কতোখানি গুরুত্ববহ। সমাজের অনেক সমস্যা তথ্যে অবাধ অধিকারের অভাবে কিংবা তথ্যের প্রাপ্যতা নিয়ে জ্ঞানের অভাবে অমীমাংসিত থেকে যায়। ব্যক্তিগত এবং কমিউনিটির সমস্যা সমাধানের জন্য তথ্য চাওয়ার অধিকার জনগণের অধিকার। পিফরডি’র অংশীদারি সিএসও গুলো তাদের সামাজিক অ্যাকশন প্রকল্প এবং বিভিন্ন সফল কার্যক্রমের মাধ্যমে এই সত্য প্রতিষ্ঠা করেছে যে, অবাধ তথ্য প্রবাহ সমাজে পরিবর্তনের সূচনা করে।

bottom of page