top of page

নাটোরে সিএসও সংস্থা ‘সমাজ উন্নয়ন সংস্থা’ নারীদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করছে


নাটোরের 'সমাজ উন্নয়ন সংস্থার' সুশীল সমাজ নেতৃত্ব পারভীন আক্তার।


২০১৭ সালে ইউনিসেফের দেয়া তথ্যমতে, বাল্য বিয়ের হারের দিক থেকে বিশ্বে বাংলাদেশ চতুর্থ। এদেশে প্রায় ৪৫ লক্ষ মেয়ের ১৮ বছর বয়সের আগেই বিয়ে হয়ে যায়। বাল্যবিয়ে রোধে সরকারের বহু প্রচেষ্টা সত্ত্বেও প্রায় ২২ শতাংশ মেয়েকে ১৮ বছর বয়সের আগে বিয়ে দেয়া হয়।


নাটোরের পারভীন আকতার বাল্যবিয়ের ভুক্তভোগী একজন নারী। তিনি সবসময় তার এলাকার মেয়েদের উৎসাহ দেন এই অন্যায়ের প্রতিবাদে রুখে দাঁড়াতে। পাশাপাশি তাদের স্বাবলম্বী করে তুলতেও সহায়তা করেন। তিনি বলেন,


“ষষ্ঠ শ্রেনীতে পড়ার সময় আমার বিয়ে হয়ে যায়। আমি চাই না আর কোনো মেয়ের পরিণতি এমন হোক।”

নারীর প্রতি সহিংসতা ও বাল্যবিয়ে রোধের লক্ষ্যে তিনি ১৯৯৯ সালে গড়ে তোলেন ‘স্বপ্ন সমাজ উন্নয়ন সংস্থা’। পরবর্তীতে তা সরকারের যুব উন্নয়ন ও সমাজসেবা অধিদফতর থেকে নিবন্ধন লাভ করে। “শুরুটা সহজ ছিল না। তবে আমি ভাগ্যবতী যে আমার স্বামীর মত একজন মানুষ সবসময় আমার পাশে ছিল।”


বর্তমানে তার এই সংগঠন নাটোর ছাড়িয়ে সারাদেশে পরিচিতি লাভ করেছে প্ল্যাটফর্মস ফর ডায়লগ (পিফরডি) এর কল্যাণে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের সহায়তায় পিফরডি বাস্তবায়ন করছে ব্রিটিশ কাউন্সিল। তার সংগঠনকে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে এই প্রকল্প থেকে পারভীন সব ধরনের সহায়তা পেয়েছেন।


পারভীন আক্তার নিজ জেলার বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনা করছেন ইউনিয়ন পরিষদ কর্মর্কর্তাদের সাথে। লিংগ বৈষম্য দূর করতে তিনি সাথে নিয়েছেন এলাকার স্থানীয় নেতৃত্বকেও।


বাঁশ থেকে বিভিন্ন শৌখিন জিনিসপত্র বানানো দিয়ে তার সংগঠনের পথচলা শুরু। পরবর্তীতে তিনি একটি বৃক্ষরোপণ কর্মসূচী হাতে নেন এবং স্থানীয় তরুনী-যুবতীদের জন্য সেলাই প্রশিক্ষণকেন্দ্র চালু করেন। এই প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে অনেক নারীর কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছে সংস্থাটি। আশাবাদী পারভীন বলেন,


“আমি চাই সকল মানুষ, বিশেষ করে নারীরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে শিখুক। শুধু চাকরির আশায় বসে না থেকে তারা যাতে উদ্যোক্তা হয়ে স্বাবলম্বী হতে পারে সেই বিষয়ে সহায়তা করতে চাই।” ‘স্বপ্ন সমাজ উন্নয়ন সংস্থা’ থেকে এখন পর্যন্ত ৭০০০ এর বেশি মানুষ সহায়তা লাভ করেছে।

বাল্যবিয়ে প্রতিরোধের পাশাপাশি তিনি সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য ‘স্বপ্ন শিশু বিকাশ কেন্দ্র’ নামে একটি অবৈতনিক বিদ্যালয় স্থাপন করেন। “এখানে কাউকে এক পয়সাও খরচ করতে হয় না। শিক্ষার্থীদেরকে বিনামূল্যে বই, ব্যাগ, খাতা, কলম দেয়া হয়।” সরকারি ও ব্যক্তিগত অনুদান, সদস্য ফি এবং স্বেচ্ছাসেবকদের অক্লান্ত পরিশ্রমে পরিচালিত হয় ‘স্বপ্ন’।


পিফরডির অন্যতম কাজ হলো স্থানীয় সংগঠন এবং সমাজকর্মীদের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা যেন ঐ অঞ্চলের সোশ্যাল অ্যাকশন প্রজেক্টে (এসএপি) কাজে সব মানুষকে নিযুক্ত করা যায়। এসএপি সাধারণত কোনো অঞ্চলের বিভিন্ন গুরুতর সামাজিক সমস্যা সমাধানে কাজ করে। পিফরডির সহায়তায় ‘স্বপ্ন সমাজ উন্নয়ন সংস্থা’ নাটোরে বাল্যবিয়ে, মাদক নিয়ন্ত্রণ ও জমি অধিকার সংক্রান্ত বিষয়ে কাজ করছে।


বাল্যবিয়ে নির্মূল প্রসঙ্গে পারভীন বলেন,

“প্রথমত বাবা মা ও বয়স্ক মানুষদেরকে বাল্যবিয়ের কুফলগুলো জানাতে হবে।”

তিনি আরো বলেন, ব্রিটিশ কাউন্সিল আমাদের এই বিষয়ে অনেক সহায়তা করেছে। পিফরডির মাধ্যমে আমাদের এমন কিছু অভিজ্ঞতা হয়েছে যা ভবিষ্যতে আমাদের এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।” এই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে পারভীন ‘স্বপ্ন সমাজ উন্নয়ন সংস্থা’র আওতায় একটি সেবামূলক সংস্থা গড়ে তুলতে চান যেখানে স্থানীয়রা একই সাথে সব ধরনের সামাজিক সেবা পাবেন।




bottom of page