top of page

স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি ফিরিয়ে আনতে সিটিজেন'স চার্টারের স্থাপনঃ সম্মিলনী যুব সংঘ

Updated: Mar 14, 2022



সম্মিলনী যুবসংঘ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার গল্পটি একেবারেই অন্যরকম। গোপালগঞ্জের করপাড়া ইউনিয়নের বর্তমানে এলাকার উন্নয়নে কাজ করলেও সংস্থাটির যাত্রা শুরু হয় রাজনৈতিক দুর্বৃত্তদের অত্যাচার প্রতিরোধ করতে গিয়ে।


আশির দশকের শেষের দিকে পাশের কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের দ্বারা শোষিত হচ্ছিলেন এখানকার বাসিন্দারা। এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে ১৯৮৯ সালে ৫৭ জন যুবককে সাথে নিয়ে এই যুবসংঘ গড়ে তোলেন বর্তমান সভাপতি ইকবাল মাহমুদের বাবা।


“এ এলাকার ব্যবসায়ীরা কিছু বেচতে পারতেন না। তাদেরকে পণ্য নিয়ে বাজার থেকে বের হয়ে যেতে হতো। অবিশ্বাস্য শোনালেও, গরিব মুসলমানদেরকে তাদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে হিন্দুদের মন্দিরে কাজ করানো হতো,” বলছিলেন ইকবাল।


এই জুলুমের বিরুদ্ধে ৫৮ জন মানুষ বাজারে অবস্থান নেয়া শুরু করেন। কাজটি মোটেই সহজ ছিল না। তবে যুবসংঘের সদস্যরাও ছিলেন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তারা মাঝে মাঝে স্থানীয় সংসদ সদস্যের কাছে অভিযোগ জানাতেন। একপর্যায়ে এই অত্যাচার বন্ধ হলে সংগঠনটি এলাকার উন্নয়নের ওপর নজর দেয়।


শুরুতে সংগঠনের সদস্য ফি ছিল মাত্র দুই টাকা। তবে, এ সামান্য টাকা দিয়েই এলাকার পরিস্থিতি বদলে দিতে প্রস্তুত ছিলেন সংগঠনের কর্মীরা। ‘৯২ সালে ইকবালের বাবা মারা গেলে তিনি দ্রুত সদস্যপদ গ্রহণ করে সংগঠনের কাজ করা শুরু করেন। শীঘ্রই সদস্যরা নয় শতাংশ জমি কিনে একটি অফিসঘর বানিয়ে ফেলেন।


ইকবাল বলেন, “২০০৮ সালে আমরা সমাজকল্যাণ অধিদপ্তরে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করি। এক বছর পর আমাদেরকে অনুমোদন দেয়া হয়। এতোদিন নিজেদের যা ছিলো তা নিয়েই আমরা কাজ চালিয়ে গেছি। তবে এই অনুমোদনের ফলে আমাদের কাজ আরো গতিশীল হয়েছে।”


তিনি জানান, তারা মূলত এলাকার গরিব মানুষদেরকে শিক্ষার ক্ষেত্রে এবং বিয়ের সময় সাহায্য করেন। যেসব ছাত্রছাত্রী বইখাতা কিনতে পারে না, তাদেরকে আমরা আর্থিক সাহায্য করি। এছাড়া, এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সেরা তিনজন ছাত্রছাত্রীকে আমরা কিছু পুরস্কার দিই। শুরুতে সংগঠনের কাছের স্কুল দিয়ে শুরু করেছি। তবে, গত বছর আমরা ইউনিয়নের মোট ১৭টি স্কুলে এই কার্যক্রম চালিয়েছি।”


“যারা বিয়ের খরচ বহন করতে পারেন না, তাদেরকেও আমরা সাহায্য করি। এলাকার প্রতিটি বিয়ের অনুষ্ঠানে আমাদের সদস্যরা স্বেচ্ছাশ্রম দেন। বর্তমানে আমাদের দুইশোরও বেশি সদস্য আছে। এদের সবার প্রাথমিক চিকিৎসার খরচ বহন করে সংগঠন। আমরা গরিব মানুষদেরকেও চিকিৎসা পেতে সাহায্য করি। গত পাঁচ বছর ধরে আমরা দুঃস্থদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করছি। মাত্র ৫০টি কাপড় দিয়ে শুরু করলেও গত বছর ২০০টি শীতের কাপড় দিয়েছি।”


সমাজ উন্নয়নমূলক কাজের অংশ হিসেবে ব্রিটিশ কাউন্সিলের প্ল্যাটফর্মস ফর ডায়লগ (পিফরডি) প্রকল্পের সাথে কাজ শুরু করে সম্মিলনী যুবসংঘ। ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে ও বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের সহায়তায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ব্রিটিশ কাউন্সিল। সরকারের জবাবদিহিতামূলক ব্যবস্থায় জনসাধারণ ও নাগরিক সংগঠনগুলোকে যুক্ত করতে এবং সুশাসন নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে এ প্রকল্প।


প্রকল্পের অংশীদার হিসেবে শিক্ষা, স্থানীয় সরকার সেবা ও মাদকাসক্তি বিষয়ক তিনটি এসএপি বাস্তবায়ন করেছে সম্মিলনী যুবসংঘ।


এসএপি পরিচালক সজিব মোল্লার জানান, করপাড়ার একটি বড় সমস্যা ছিল মাদকাসক্তি। “মাদক নির্মূলে আমরা প্রচুর কাজ করেছি। সচেতনতা তৈরি করতে বিভিন্ন স্কুলে এবং দুটি ক্লাবে বৈঠক করেছি। পাশাপাশি, শোভাযাত্রা এবং গণশুনানীর আয়োজন করেছি। শুনানীতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও অন্যান্য সরকারী কর্মকর্তাসহ মোট ৭৫ জন অংশগ্রহণ করেছেন।”


সজিব জানান, ইস্কান্দার মোল্লা নামে তার এক আত্মীয় বাবার মৃত্যুর পর হতাশা ও বিষন্নতা থেকে মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন। “আমাদের সচেতনতামূলক প্রচারণা তাকে নাড়া দিতে সক্ষম হয়েছে। কাউন্সেলিং এর মাধ্যমে আমরা তাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে এনেছি। ২২ বছর বয়সী ছেলেটি এখন একটি পোল্ট্রি ফার্মে কাজ করে এবং নিয়মিত ফুটবল, ভলিবলসহ বিভিন্ন খেলাধুলা করে।”

শিক্ষার মান বিষয়ক এসএপির কাজ করেছেন সজিব শেখ।


“আমরা স্থানীয় বিদ্যালয়ে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছি। শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটির সাথেও বৈঠক করেছি। এখন পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। এই পরিবর্তনকে টেকসই করতে কাজ করছি আমরা।”


এলাকায় স্থানীয় সরকারের অপর্যাপ্ত সেবার বিষয়ে এসএপি পরিচালনা করেছেন চিন্ময় বিশ্বাস।


“আমাদের লক্ষ্য ছিল সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কাজে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা ফিরিয়ে আনা। স্থানীয় সরকারের প্রতিটি সেবা সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সচেতন করতে আমরা কয়েকটি বৈঠক, একটি র‍্যালী এবং একটি গণশুনানীর আয়োজন করেছি। চূড়ান্ত পদক্ষেপ হিসেবে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে একটি সিটিজেন চার্টার স্থাপন করেছি।”

প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই করপাড়ার মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছে সম্মিলনী যুবসংঘ। পিফরডির কাজ শেষ হওয়ার পরও সংস্থাটি দীর্ঘদিন সমাজসেবামূলক কাজ চালিয়ে যেতে চায় বলে জানালেন ইকবাল।

bottom of page